৩ দিন ভারত ভ্রমণে যেতে পারবেন না বাংলাদেশিরাসৌদিতে বাংলাদেশি হজযাত্রীর মৃত্যুঢাকায় গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টিদেশজুড়ে তাপপ্রবাহ বইছে, কিছু স্থানে বৃষ্টির আভাসযুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল
No icon

নষ্ট হচ্ছে ওষুধের মান

দেশে দুই লাখেরও বেশি ফার্মেসি রয়েছে। এর মধ্যে মডেল কিছু ফার্মেসিতে নির্দেশিত তাপমাত্রায় ওষুধ সংরক্ষণ করা হয়; ৯০ শতাংশেরই নেই যথাযথ তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। এতে করে এসব ফার্মেসিতে সংরক্ষিত সাধারণ ওষুধের পাশাপাশি অ্যান্টিবায়োটিক, টিকা, ইনসুলিন, রোগ নির্ণয়ের কিট ও বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার উপকরণের (রি-এজেন্ট) মান নষ্ট হচ্ছে। মানহীন এসব ওষুধ জীবনরক্ষার পরিবর্তে জীবনবিনাশের কারণ পর্যন্ত হতে পারে। এক মাস ধরে চলা দাবদাহে বিষয়টি আরও উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।সাধারণত তিন ধরনের ওষুধ নির্ধারিত তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়। বায়োলজিক্যাল বা ভ্যাকসিন-জাতীয় ওষুধ ৪ থেকে ৮ ডিগ্রিতে, অ্যান্টিবায়োটিক-জাতীয় ওষুধ ১২ থেকে ২০ ডিগ্রিতে রাখতে হয়। এর বাইরে অন্যান্য ওষুধের ক্ষেত্রে প্রয়োজন ২৫ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। কিন্তু সরেজমিনে রাজধানীর একাধিক এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, মডেল কিছু ফার্মেসিতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা থাকলেও অধিকাংশ ফার্মেসিতেই তা নেই।রাজধানীর রামপুরার অন্তত ১০টি ফার্মেসি ঘুরে মাত্র একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) ফার্মেসি পাওয়া যায়। অন্য ৯টিতেই নেই তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের ন্যূনতম ব্যবস্থা। এই এলাকার আফিয়াত মেডিসিন মার্ট। ওষুধ বিক্রয় কেন্দ্রটিতে ভেতরে দুটি ছোট ফ্যান থাকলেও নেই এসি। আবার নিবন্ধন ছাড়াই চলছে ফার্মেসিটি।

ফার্মেসির ব্যবস্থাপক (বিপণন) মেহেদি হাসান বলেন, তীব্র গরমে যে ওষুধ নষ্ট হয় সেটা সবাই জানে, কেউ মানে না। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর থেকে এ ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা না থাকায় বিষয়টি নিয়ে আমরা তেমন ভাবিনি।শাহবাগের বিপণি বিতানের নিচতলার মার্কেটে ৪০টির মতো ওষুধের ফার্মেসি। যার দু-একটিতে এসির দেখা মিললেও সিংহভাগেই নেই। মার্কেটটিতে পাইকারি ও খুচরা ওষুধ বিক্রি করছে পপুলার মেডিক্যাল স্টোর। কিন্তু দোকানে নেই শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। ফার্মেসির মালিক যোগেশচন্দ্র কর্মকার বলেন, ওষুধের মান নষ্ট হতে পারে এটা জানি। কিন্তু অধিদপ্তর থেকে কখনো এ ব্যাপারে বলা হয়নি।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যালে বিশ^বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের সঙ্গেই আজিজ কো-অপারেটিভ মেডিসিন মার্কেট। যেখানে ২৬টি বিক্রয়কেন্দ্র থাকলেও একটিতেও নেই তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণযন্ত্র।এই মার্কেটের সানিম ফার্মার মালিক মোহাম্মদ ফোরকন উদ্দিন বলেন, নির্ধারিত তাপমাত্রায় না রাখলে অবশ্যই ওষুধের মান নষ্ট হবে। সেন্ট্রাল এসি লাগানোর কথা বলে মার্কেট কর্তৃপক্ষ দোকানগুলো থেকে কয়েক লাখ টাকা নিয়েছে। কিন্তু এ পর্যন্ত তা হয়নি। ওষুধ যেহেতু মানুষের জীবন-মরণের ব্যাপার, তাই সরকার মার্কেট কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে জোর দিলে পরিবর্তন হতে পারে।

সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বিপরীত মসজিদ মার্কেটে ১৮টি ফার্মেসি রয়েছে। মার্কেটের মুন মুন ফার্মার ব্যবস্থাপক (বিপণন) সাইফুল ইসলাম বলেন, পশ্চিমমুখী হওয়ায় সূর্যের আলো এখানে সরাসরি এসে পড়ে। কিন্তু ব্যবস্থা না থাকায় ওষুধের মান নষ্ট হতে পারে। এক্ষেত্রে ড্রাগিস্ট কিংবা মালিক সমিতি ব্যবস্থা নিতে পারে। তারা না করলে অধিদপ্তর কঠোর হোক।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নীতিমালায় কক্ষের আর্দ্রতা ৬০ শতাংশের নিচে রাখার কথা বলা হয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষে সংরক্ষণ কক্ষে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র থাকার কথাও বলা হয়েছে। কক্ষের আয়তনভেদে এক বা একাধিক রেফ্রিজারেটর ও ফ্রিজার রাখতে হবে। এ থেকে উৎপাদিত তাপ বের করে দেওয়ার জন্য ব্যবস্থা করতে হবে একাধিক এক্সহৌস্ট ফ্যানের। বিশেষ করে সেফরাডিন ও ভিটামিন-জাতীয় ওষুধ ২৫ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যে রাখতে হয়।ওষুধ প্রস্তুতের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইনসেপ্টার এক কর্মকর্তা বলেন, ওষুধের মান সুরক্ষায় নির্দিষ্ট তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি ওষুধের কার্যকারিতা আমরা দুই বছরের মতো দিয়ে থাকি। দীর্ঘ এ সময়ে কার্যকারিতা তখনই থাকবে যখন মোড়কে উল্লিখিত তাপমাত্রার মধ্যে রাখা হবে। এমনকি এটি শতভাগ নিশ্চিত করা হলেও ওষুধের কার্যকারিতা ২-৩ শতাংশ কমে যায়। সেখানে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা না থাকলে, সেই ওষুধ নষ্টের ঝুঁকি রয়েছে। দ্রুত তা কার্যকারিতা হারাবে। এক্ষেত্রে রোগ নিরসনে রোগী ওষুধ খেলেও তা কার্যকর হবে না। বরং বিপরীত প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে। এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।