এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের প্রার্থীর প্রচারে যাওয়ার সুযোগ বন্ধ চান ডিসিরাশেখ হাসিনাকে ফেরত চায় ঢাকা, দিল্লির সাদামাটা প্রতিক্রিয়াশেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়ে ট্রাইব্যুনালের সামনে মিষ্টি বিতরণ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড, সম্পদ বাজেয়াপ্তের আদেশ, মামুনের ৫ বছর কারাদণ্ডদেশজুড়ে সতর্ক অবস্থান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর
No icon

শেখ হাসিনাকে ফেরত চায় ঢাকা, দিল্লির সাদামাটা প্রতিক্রিয়া

মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দণ্ড পাওয়া ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁর সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালকে ফিরিয়ে দিতে ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ। রায়ের বিষয়ে ভারত পক্ষে-বিপক্ষে কিছু বলেনি। শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে দেবে কিনা–এ বিষয়েও গত এক বছরের মতোই নীরব রয়েছে। দুই দেশের বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তিতে ফেরত না দেওয়ার সুযোগ রয়েছে ভারতের। তবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জানিয়েছেন, শেখ হাসিনাকে ফেরাতে আবারও চিঠি দেওয়া হবে দিল্লিকে।গতকাল সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামালকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন জুলাই গণহত্যার দায়ে। এর আগে গত ২ জুলাই আদালত অবমাননার দায়ে শেখ হাসিনাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল।গতকালের রায়ে শেখ হাসিনা একজন অভিযুক্ত থেকে পলাতক ফাঁসির আসামিতে পরিণত হয়েছেন। মৃত্যুদণ্ডের রায়ের পর বিবৃতিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের দ্বিতীয় কোনো দেশ আশ্রয় দিলে তা হবে অবন্ধুসুলভ আচরণ এবং ন্যায়বিচারের প্রতি অবজ্ঞা। ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই, তারা যেন অবিলম্বে দণ্ডপ্রাপ্ত এই দুই ব্যক্তিকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করে। দুই দেশের মধ্যে বিরাজমান প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুসারে এটি ভারতের জন্য অবশ্য পালনীয় দায়িত্ব।

শেখ হাসিনার সাজা কার্যকরে ভারতের কাছে ফেরত চাওয়া প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশের অবস্থান জানিয়ে চিঠি আজ রাতেই (সোমবার) বা কাল (মঙ্গলবার) সকালে, যেভাবেই হোক, পাঠানো হবে। শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে গত বছরের ডিসেম্বরে চিঠি দিয়েছিল বাংলাদেশ। ভারত প্রাপ্তি স্বীকার করলেও, চিঠির জবাব দেয়নি। আশ্রয় সাময়িক বললেও, তাঁকে ফেরত দেওয়ার বিষয়ে কথা বলেনি। এ প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। বিচারিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে এবং তারা দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। ফেরত দেওয়ার অনুরোধ ভারত-বাংলাদেশের বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় প্রত্যর্পণ চুক্তির অধীনেই জানানো হবে। বিদ্যমান চুক্তির অধীনে ভারত ফেরত দিতে বাধ্য কিনাপ্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন,বিষয়টি আইনগত ব্যাখ্যার ওপর নির্ভরশীল। আমার বোঝাপড়া হলো আদালত রায়ে দণ্ড ঘোষণার পর তাঁকে ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন, এবং আমরা ভারতকে সরকারিভাবে তা অবহিত করব। ভারত যদি ফিরিয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানায় তখন ঢাকা কী করবেএ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,পরিস্থিতি দেখা দিলে আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।

ভারত কি ফেরত দেবে?

২০১৩ সালে বাংলাদেশ-ভারতের বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি হয়। এতে বলা হয়েছিল, কমপক্ষে এক বছর জেল হতে পারে, এমন অপরাধ করে থাকলে সেই ব্যক্তিকে প্রত্যর্পণ করা হবে। ২০১৬ সালে প্রত্যর্পণ সহজ করে সই করা চুক্তিতে বলা হয়, কারও নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকলেই তাঁকে প্রত্যর্পণ করা যাবে। অপরাধের প্রমাণ দাখিল করতে হবে না।তবে এতে ফাঁকফোকড় রয়েছে। সংশোধিত চুক্তিতে বলা হয়েছে, যদি অনুরোধ-প্রাপক দেশে মামলা চলে তবে সেই ব্যক্তিকে ফেরত না দেওয়ার সুযোগ থাকবে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ভারতে মামলা না থাকলেও ফিরিয়ে না দিতে তাদের কাছে চুক্তির একটি ধারা ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। যদি অনুরোধ-প্রাপক দেশের মনে হয় অভিযোগগুলো শুধু ন্যায় বিচারের স্বার্থে সরল বিশ্বাসে আনা হয়নি তাহলে তারা ফেরত দেওয়ার অনুরোধ নাকচ করতে পারবে। এই ধারা অনুযায়ী ভারত যদি বলে শেখ হাসিনা বাংলাদেশে সঠিক ও সুষ্ঠু বিচার পেয়েছেন বলে তারা মনে করছে না, তাহলে ফেরত দেওয়ার অনুরোধ নাকচ করতে পারবে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভারতের জিন্দাল গ্লোবাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত বলেছেন, হাসিনার বিরুদ্ধে আদালতের রায় প্রত্যাশিত ছিল। তবে ভারত বাংলাদেশের এই পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে প্রত্যর্পণ করবে না।তিনি আরও বলেন,নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধ নিয়ে কারও কোনো সন্দেহ নেই। হাসিনা সরাসরি গুলি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন, এমন প্রমাণও রয়েছে। যদিও আওয়ামী লীগ একটি পাল্টা-বয়ান তৈরির চেষ্টা করবে। কিন্তু সার্বিকভাবে বাংলাদেশিরা মনে করেন, হাসিনা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন।আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তির কয়েকটি শর্তের কারণে ভারত শেখ হাসিনাকে ফেরাতে বাধ্য নয়। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরী বলেন, ফাঁসির রায়ের কারণে হাসিনার প্রাণসংশয়ের আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে ভারত প্রত্যর্পণে বাধ্য নয়।