রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রায় পিছিয়ে তৈরি পোশাক খাতঢাকাসহ ৫ বিভাগে বৃষ্টির আভাস, অব্যাহত থাকবে তাপপ্রবাহপ্রতিদিন মা হারাচ্ছে ৩৭ ফিলিস্তিনি শিশুস্কুল-মাদ্রাসা খুলছে আজ, বন্ধ থাকছে ২৫ জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানআজ বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস
No icon

স্বস্তিতে নেই অর্থনীতি

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বলেছে, সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খুব একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় নেই। রপ্তানি আয় ও রাজস্ব সংগ্রহে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি থাকলেও মূল্যস্ম্ফীতি বাড়ছে। রেমিট্যান্স আয় কমে গেছে। বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য চাপের মুখে পড়েছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নেও গতি নেই। এমন অবস্থায় অর্থনীতির জন্য সম্প্রসারণমূলক নীতি দরকার। অন্যদিকে কভিডের প্রভাব মোকাবিলায় নতুন প্রণোদনা প্যাকেজ নেওয়ার আগে চলমান প্যাকেজগুলোর বাস্তবায়ন শেষ করার সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।গতকাল বৃহস্পতিবার দেশের অর্থনীতির অন্তর্বর্তীকালীন পর্যালোচনায় সিপিডি এমন মতামত দিয়েছে। রাজধানীর ধানমন্ডিতে নিজস্ব কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য তুলে ধরেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। এ সময় সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ও সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান উপস্থিত থেকে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। সিপিডির প্রতিবেদনে করোনা অতিমারির প্রভাব থেকে কীভাবে অর্থনীতির পুনরুদ্ধার হচ্ছে এবং কোন উপায়ে টেকসই করা যাবে, তা তুলে ধরা হয়।সিপিডির প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনা মোকাবিলায় সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের উদ্যোক্তারা তেমন সহায়তা পায়নি। বৃহৎ শিল্প খাতের জন্য ঘোষিত প্যাকেজ থেকে ঋণখেলাপিরাও সহায়তা পেয়েছেন। কিন্তু প্রকৃত সমস্যাগ্রস্ত ছোট অনেক উদ্যোক্তা সুবিধা পাচ্ছে না। এ জন্য ব্যাংকের বাইরে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ছোট উদ্যোক্তাদের সহায়তা করতে হবে। সরকার যে সহায়তা করেছে, তা যেমন সবাই পায়নি, তেমনি পরিমাণও কম। এখনও অনেকে সমস্যাসংকুল সময় পার করছে। এ অবস্থায় নতুন প্রণোদনা দরকার। তরে নতুন প্রণোদনা প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের উপযোগী করে সাজাতে হবে।


ফাহমিদা খাতুন বলেন, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে রাজস্ব সংগ্রহ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ভালো। তবে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় হচ্ছে না। লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে আগামী মাসগুলোতে ৩০ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে, যা অসম্ভব। আর রাজস্ব সংগ্রহ ঠিকমতো না হলে বাজেট বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়বে। ইতোমধ্যে এডিপির যা বাস্তবায়ন হয়েছে, সেখানে সরকারের তহবিল থেকেই ব্যয় বেশি হয়েছে। বৈদেশিক সহায়তার ব্যবহার কম হচ্ছে। কিন্তু সরকারকে বৈদেশিক সহায়তা বেশি ব্যবহারে মনোযোগী হতে হবে। তিনি বলেন, সবচেয়ে দুঃখজনক হচ্ছে, অর্থবছরের চার মাসে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের এডিপি বাস্তবায়ন ৬ দশমিক ৪ শতাংশ। কিন্তু এ নিয়ে কেউ কথা বলছে না।তিনি বলেন, উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য ঊর্ধ্বমুখী। করোনার কারণে অনেকের আয় কমে গেছে। কাজ নেই। জিনিসপত্রের বাড়তি মূল্য অনেকের জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বর্তমান মূল্যস্ম্ফীতিতে আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতির যেমন প্রভাব আছে, তেমনি বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতাও দায়ী। তিনি বলেন, পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, গত অক্টোবরে মূল্যস্ম্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৬ শতাংশ, যা বাস্তবতার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়।সিপিডি বলেছে, ব্যক্তি খাতের ঋণ প্রবাহ বাড়লেও লক্ষ্যমাত্রা থেকে অনেক পিছিয়ে। এ সময়ে বিনিয়োগ বাড়ানো জরুরি। কিন্তু তা আশানুরূপ হচ্ছে না। অন্যদিকে প্রণোদনার ঋণ অনেক খেলাপি প্রতিষ্ঠানও পাচ্ছে। প্রণোদনার ঋণ ফেরত পাওয়া আর্থিক খাতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া লেনদেনের ভারসাম্য রক্ষার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া দরকার। কারণ রপ্তানি বাড়লেও পণ্যমূল্য বাড়েনি। অন্যদিকে আমদানি বেড়েছে; রেমিট্যান্স কমেছে। ফলে বিদেশি মুদ্রার মজুদে চাপ পড়েছে। এ অবস্থায় তৈরি পোশাকের দাম বাড়াতে উদ্যোগ নেওয়া এবং উচ্চমূল্যের পোশাক উৎপাদনে যেতে হবে।খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, করোনাপরবর্তী পুনরুদ্ধার হচ্ছে। কিন্তু তা টেকসই হচ্ছে না। করোনার সময় কিছু ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর অবস্থান সুদৃঢ় হয়েছে। তিনি প্রতিযোগিতা কমিশন, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে আরও শক্তিশালী করার সুপারিশ করেন।