তিন দফা দাবিতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আন্দোলনরত সহকারী শিক্ষকদের সঙ্গে সোমবার রাতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বৈঠকের পর শিক্ষকনেতারা তাদের আন্দোলন ও কর্মবিরতি স্হগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু পরে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী তৃণমূল শিক্ষকদের মতামতে কর্মবিরতি ও কর্মসূচি স্থগিতের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন তারা। মন্ত্রণালয় দাবি মানার আশ্বাস দিলেও অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি ও সারাদেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কর্মবিরতির কর্মসূচি বহাল রাখার নতুন ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষক নেতারা।রোববার (৯ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার পর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন শিক্ষক নেতারা। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আবু তাহের মো. মাসুদ রানা। সভায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক থেকে বেরিয়ে এবে শিক্ষকনেতারা জানান, তারা অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি স্থগিত করেছেন।সোমবার থেকে সারাদেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যথারীতি ক্লাস চলবে।
এদিন রাতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়েরু পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে একই তথ্য জানান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা আবদুল্লাহ শিবলী সাদিক।পরে বিষয়টি নিয়ে আান্দোলনরত শিক্ষদের মধ্যে মতানৈক্য তৈরি হয়। শহীদ মিনারে অবস্থান করা শিক্ষক এবং শিক্ষক নেতারাও দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েন।রোববার দিনগত রাত সাড়ে ১২টার দিক সহকারী শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড বাস্তবায়ন সমন্বয় পরিষদ সমন্বয়ক মু. মাহবুবুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। সোমবার লক্ষাধিক শিক্ষক কেন্দ্রীয় অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দেবেন। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবো। আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি চলবে।সহকারী শিক্ষকদের তিন দফা দাবি হলো সহকারী শিক্ষকদের বর্তমান বেতন স্কেল ১৩তম গ্রেড থেকে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করা; শিক্ষকদের ১০ ও ১৬ বছরপূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির বিষয়ে জটিলতার অবসান এবং সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বর্তমানে সারাদেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৫৬৯টি। এসব বিদ্যালয়ে কর্মরত রয়েছেন ৩ লাখ ৮৪ হাজারের কিছু বেশি শিক্ষক। তাদের অধিকাংশই সহকারী শিক্ষক। আর এসব বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করে প্রায় ৯৬ লাখ শিশুশিক্ষার্থী। শিক্ষকরা কর্মবিরতির ডাক দিলে এই শিক্ষার্থীদের ক্লাস বন্ধ হয়ে যায়।এদিকে, এতদিন ধরে চলা কর্মবিরতির কারণে একরকম স্থবির হয়ে পড়েছিল বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যাবতীয় কার্যক্রম। শিশুরা বিদ্যালয়ে গেলেও শ্রেণিকক্ষে ক্লাস নেননি শিক্ষকরা। ভেঙে যায় তাদের পাঠচক্র (গ্রুপভিত্তিক পড়ালেখা)। শিক্ষার প্রতি আগ্রহও হারিয়ে ফেলে অনেকে। এ ব্যাপারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে অভিভাবক ঐক্য ফোরাম।