এনসিপির সঙ্গে গণঅধিকারের একীভূত হওয়া নিয়ে জটিলতাগাজা শহর ত্যাগের নির্দেশ জারি, কয়েক ঘণ্টা ধরে বিমান হামলাছুটির দিনের সকালে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিগভীর নিম্নচাপে টানা বৃষ্টি, জনদুর্ভোগবৃষ্টির কারণে সবজির দাম কিছুটা বাড়তি
No icon

আদালতে ভার্চুয়ালি সাক্ষ্য দিতে প্রস্তুত হচ্ছে ডিএমপি

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) আদালতে ভার্চুয়ালি সাক্ষ্য দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। এতে বিচার কার্যক্রম দ্রুত হবে, কর্মঘণ্টা ও রাষ্ট্রীয় ব্যয় সাশ্রয় হবে এবং মামলাজট কমবে বলে মনে করছে পুলিশ ও আইনজীবীরা। ইতোমধ্যে এ নিয়ে কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেছে ডিএমপি।ঢাকা মহানগর পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বিভিন্ন আদালত ও ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিতে প্রতিদিন ঢাকা মহানগর পুলিশের সদস্যদের নামে অন্তত ৯শ সমন আসে। কিন্তু অসুস্থতাজনিত কারণ, দৈনন্দিন আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ এবং মামলা তদন্তসহ নানা পুলিশিং কাজে ব্যস্ততার কারণে অন্তত ২শ পুলিশ সদস্য সাক্ষ্য দিতে যান। বাকিরা সাক্ষ্য দিতে পারেন না। ফলে পুলিশ সাক্ষীর কারণে কোনো কোনো মামলার বিচার কাজ আটকে থাকে। আবার ঢাকার বাইরে বিভিন্ন বিভাগীয় এবং জেলা শহরের আদালতে সাক্ষ্য দিতে গেলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যকে আবার ডিএমপিতে কাজে যোগ দিতে দুই তিন দিন লেগে যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেশিও লাগে। এ ছাড়া একজন পুলিশ সদস্য আদালতে সশরীরে উপস্থিত থেকে সাক্ষ্য দিতে গেলে দূরত্ব ভেদে তাকে ভাতা প্রদান করতে হয়। এ ছাড়া জ্বালানি খরচ হয়। কিন্তু ভার্চুয়ালি কোনো পুলিশ সদস্য ঢাকার বাইরের কোনো জেলা আদালতে সাক্ষ্য প্রদান করলে তাকে আর ওই জেলায় যাওয়া-আসার ঝক্কি নিতে হচ্ছে না। তা ছাড়া কর্মঘণ্টা কমছে। বিচার কাজও দ্রুত হচ্ছে।

২০২০ সালে দেশে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের প্রকোপ শুরু হওয়ার পর আদালতে সশরীরে উপস্থিতি ছাড়াই অডিও-ভিডিওর মাধ্যমে ভার্চুয়ালি আসামিদের জামিন শুনানি ও মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছিল। এতে তখন বিচারপ্রার্থীদের দ্রুত ন্যায়বিচার পাওয়ার পথ সুগম হয়। কিন্তু করোনার প্রকোপ কমে যাওয়ার পর একটা পর্যায়ে ভার্চুয়ালি বিচার কার্যক্রম থমকে যায়। বর্তমানে মাঝেমধ্যে কারাবন্দি গুরুত্বপূর্ণ মামলার আসামিদের হাজিরা নেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ মামলার যেসব আসামির নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে।অডিও-ভিডিও বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে বিচারপ্রার্থী পক্ষগণ, তাদের আইনজীবী বা সংশ্লিষ্ট অন্য ব্যক্তি বা সাক্ষীগণের ভার্চুয়াল উপস্থিতিতে সাক্ষ্য গ্রহণ ও শুনানি সংক্রান্ত অনুসরণীয় বিষয়ে গত ১৪ মে সুপ্রিমকোর্টের বিচার শাখা প্র্যাকটিস নির্দেশনা জারি করে। এই নির্দেশনার আলোকে যে কোনো আদালত ভার্চুয়ালি মামলার হাজিরা, জামিন শুনানি ও সাক্ষ্য গ্রহণ করতে পারবে। ওই নির্দেশনায় কীভাবে অনলাইনে সাক্ষ্য নিতে হবে তার বিস্তারিত গাইডলাইনও করে দেয়।

সুপ্রিমকোর্টের প্রাকটিস নির্দেশনার আলোকে ভার্চুয়ালি পুলিশ সাক্ষীদের যেন বিভিন্ন আদালত সাক্ষ্য গ্রহণ করে এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পুলিশ নিজেদের পূর্বপ্রস্তুতিও শুরু করেছে। এরই অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার প্রশাসন (অতিরিক্ত আইজি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মো. সরওয়ার গত ১১ সেপ্টেম্বর কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়নে অধীনস্থদের নিয়ে সভা করেন। ওই সভায় পুলিশ কর্মকর্তাদের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর পুলিশে কর্মরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরাও উপস্থিত ছিলেন। সভায় ভার্র্চুয়ালি পুলিশ সদস্যদের সাক্ষ্য গ্রহণে নিজেদের নানা প্রস্তুতির চ্যালেঞ্জ এবং উত্তরণের উপায় নিয়ে আলোচনা করেন উপস্থিত কর্মকর্তারা।ঢাকা মহানগর পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মহানগর দায়রা জজ আদালত ঢাকার অধীনস্থ বিভিন্ন আদালত থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত মোট ৪১ হাজার ৪৮০টি সমন ইস্যু হয়। এর মধ্যে ১৪ হাজার ৩৪৯ জন পুলিশ সাক্ষী আদালতে উপস্থিত হয়ে সাক্ষ্য প্রদান করেন। এ ছাড়া চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট, ঢাকার অধীনস্থ বিভিন্ন আদালত থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত মোট ৩০ হাজার ৯৩৮টি সমন ইস্যু হয়। এর মধ্যে ৮ হাজার ৯৫০ জন পুলিশ সাক্ষী আদালতে উপস্থিত হয়ে সাক্ষ্য দেন। মহানগর দায়রা জজ আদালত, ঢাকা এবং চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট, ঢাকার আদালত হতে উল্লিখিত সময়ে মোট ৭২ হাজার ৩৮৬টি সমন ইস্যু হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালতে মোট ২২ হাজার ৯৫৪ জন পুলিশ সাক্ষী উপস্থিত হন।