
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকার কাওলা থেকে সাভারের ইপিজেড পর্যন্ত নির্মিত হচ্ছে ঢাকা-আশুলিয়া উড়াল সড়ক। ২০১৭ সালে অনুমোদিত প্রকল্পটিতে নতুন করে সংশোধন করতে হচ্ছে। এতে উড়াল সড়কের নকশায় বেশ পরিবর্তন আসছে। এ জন্য অন্তত চারটি ভেরিয়েশন প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে। পরিবর্তিত প্রস্তাবে প্রকল্প এলাকার ধউর থেকে আশুলিয়া পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি বিলুপ্ত হবে। ওই অংশ দিয়ে চলাচল করবে নৌযান। প্রকল্পের এমন চারটি বড় পরিবর্তন আসছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী নতুন করে প্রকল্প সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে সেতু বিভাগ।বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের তথ্য মতে, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পে চারটি ভেরিয়েশন করতে হচ্ছে। এসব কাজ বাস্তবায়ন হলে নদী পথ, রেলপথ, সড়ক পথ ও বিমানবন্দর সংযোগ ব্যবস্থায় আধুনিকায়ন ঘটবে। পাশাপাশি এক্সপ্রেস হবে আরও সহজ ও পরিবেশবান্ধব।জানা গেছে, প্রথমত- তুরাগ নদীতে সেতুর উচ্চতা বাড়ছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ তথা বিআইডব্লিউটিএ তুরাগ নদীর শ্রেণি উন্নীত করেছে। ফলে বড় আকারের নৌযান চলাচল নির্বিঘ করতে তিনটি সেতুর উচ্চতা ৭.৬২ মিটার থেকে বাড়িয়ে ন্যূনতম ১২.২ মিটার এবং স্পেন দৈর্ঘ্য ৩০.৪৮ মিটার থেকে ন্যূনতম ৯০ মিটার করা হচ্ছে। পাশাপাশি ধউর থেকে আশুলিয়া পর্যন্ত বিদ্যমান ৩ কিলোমিটারের সড়কটি বিলুপ্ত করে নৌযান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এতে নদীপথে যোগাযোগ আরও সহজ হবে এবং স্থানীয় পরিবেশের জন্যও এটি হবে ইতিবাচক পদক্ষেপ।
দ্বিতীয়ত- কাওলা রেলক্রসিং এলাকায় দীর্ঘ স্প্যান। বাংলাদেশের রেলের পরিকল্পনা অনুযায়ী কাওলা এলাকায় (চেইজে ০+৭৫০) রেললাইন সংখ্যা দুই থেকে বাড়িয়ে ছয়টিতে উন্নীত করা হচ্ছে। এ জন্য পিয়ার নম্বর ২৬ থেকে ২৭ এর মধ্যে স্প্যান দৈর্ঘ্য ৩৫ মিটার থেকে বাড়িয়ে ১২৫ মিটার করা হচ্ছে। এতে রেল চলাচল নির্বিঘ হওয়ার পাশাপাশি সিগন্যাল ও নিরাপত্তা আরও জোরদার হবে।তৃতীয়ত- বাইপাইল মোড়ে ট্রাম্পেট ইন্টারচেঞ্জ। নবীনগর-বাইপাইল-চন্দ্রা এবং আশুলিয়া-বাইপাইল-চন্দ্রা সড়ক দেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক। উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের প্রায় ৩০টি জেলার যানবাহন প্রতিদিন এই সড়ক ব্যবহার করে ঢাকায় প্রবেশ করে। যানজট নিরসন ও বিরতিহীন চলাচল নিশ্চিত করতে বাইপাইল মোড়ে একটি আধুনিক গ্রেড সেপারেটেড ট্রাম্পেট (ইন্টারচেঞ্জ) নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল থেকে ঢাকায় প্রবেশ আরও সহজ হবে। তাই আশুলিয়া-বাইপাইল-নবীনগরগামী একটি র;্যাম্প নির্মাণ করা হবে।চতুর্থত- বিমানবন্দরে ওঠা-নামার র;্যাম্প। শাহজালাল বিমানবন্দরের যাত্রীদের সুবিধার্থে এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গেবিমানবন্দর টার্মিনালে সরাসরি ওঠানামার জন্য দুটি বিশেষ র;্যাম্প নির্মাণ করা হবে। এতে বিমানবন্দরগামী যাত্রীদের যাতায়াত আরও নির্বিঘ দ্রুত ও নিরাপদ হবে।
এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে সড়ক, রেল, নৌ ও বিমান যোগাযোগের এক যুগান্তকারী উন্নয়ন ঘটবে। শুধু রাজধানী ঢাকা নয়, আশপাশের শিল্পাঞ্চলসহ গার্মেন্টস জোন এবং উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জন্য যাতায়াত হবে আরও দ্রুত, সহজ ও নিরাপদ। এ জন্য ভেরিয়েশনের মাধ্যমে প্রকল্পের কিছু সংশোধন আসছে। এসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে যাত্রীদের চলাচল আরও সহজ এবং পরিবেশবান্ধব করতে।সেতু বিভাগ জানিয়েছে, আশুলিয়া উড়াল সড়ক প্রকল্পটির বর্তমান ব্যয় ১৭ হাজার ৫৫৩ কোটি টাকা। ভেরিয়েশনের কারণে ব্যয় আরও প্রায় সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা বাড়তে পারে। এমন উদ্যোগ না নিলে যাতায়াত সুবিধা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। আর ব্যয় বৃদ্ধির মধ্যে ৭৫ শতাংশ বাড়ছে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বৃদ্ধি, ট্যাক্স-ভ্যাট-কাস্টমস ডিউটি এবং প্রাইস কনটিনজেনসি-ফিজিক্যাল কনটিনজেনসির কারণে। আর বাকি ২৫ শতাংশ খরচ বাড়ছে ভূমি অধিগ্রহণ, পরিষেবা স্থানান্তর এবং অতিরিক্ত কাজের কারণে। প্রকল্পের ভৌত নির্মাণকাজের অগ্রগতি ৫৪.৫০ শতাংশ।