
রপ্তানি খাতের কাঁচামাল কনটেইনারে আমদানির সময় বাড়তি মাশুল দিতে হবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে। একই পণ্য রপ্তানিতে আরেক দফা মাশুল গুনতে হবে বেসরকারি কনটেইনার ডিপোতে (আইসিডি)। দুইয়ে মিলে বাড়তি মাশুল দাঁড়াবে প্রায় ৯১ শতাংশ!
বন্দর কর্তৃপক্ষ বাড়িয়েছে প্রায় ৪১ শতাংশ, আর আইসিডি মালিকরা বাড়িয়েছেন প্রায় ৫০ শতাংশ। ব্যবসায়ীদের আপত্তি উপেক্ষা করে বাড়তি মাশুলের এই খড়্গ চাপিয়েছে এ মাস থেকেই। এদিকে শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনও তাদের জাহাজ ভাড়া বাড়াবে বলে ঘোষণা দিয়েছে।বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ জানান, চট্টগ্রাম বন্দর ও আইসিডি সব ধরনের সেবার খরচ ইচ্ছামতো বাড়িয়েছে। এতে খরচ বাড়বে জাহাজ মালিকদের। খরচ সমন্বয় করতে এখন তারাও জাহাজ ভাড়া বাড়াবেন।বন্দর ব্যবহারকারী এবং ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম চট্টগ্রামের সভাপতি এস এম আবু তৈয়ব বলেন, এভাবে ঘাটে ঘাটে বাড়তি মাশুল কিংবা ভাড়া দিতে হলে অনেক শিল্পকারখানার মালিকদের ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হবে।
সিকম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিরুল হক বলেন, শেষ অর্থবছরেও চট্টগ্রাম বন্দর মুনাফা করেছে দুই হাজার ৯১২ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। তবু তাদের এত ট্যারিফ বাড়ানো জুলুম ছাড়া কিছুই না।সমুদ্রপথে আমদানি-রপ্তানি কনটেইনারের ৯৯ শতাংশই চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পরিবহন হয়। আবার শতভাগ রপ্তানি পণ্য ও ৬৫ ধরনের আমদানি পণ্যের খালাস প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে তারা। বন্দরে ৪১ শতাংশ চট্টগ্রাম বন্দরে গড়ে ৪১ শতাংশ খরচ বেড়েছে ব্যবসায়ীদের। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে কনটেইনার পরিবহনের মাশুল। অথচ সমুদ্রপথে বাংলাদেশের রপ্তানির প্রায় পুরোটাই হয় কনটেইনারে। আবার শিল্পের কাঁচামাল ও মূল্যবান যন্ত্রপাতিও আমদানি হয় কনটেইনারে। ফলে কনটেইনারে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে মাশুল বাড়ানোর প্রভাব বেশি পড়বে বলে জানান ব্যবহারকারীরা। এতদিন ২০ ফুট লম্বা একটি কনটেইনারে গড়ে মাশুল ছিল ১১ হাজার ৮৪৯ টাকা। এখন দিতে হবে ১৬ হাজার ২৪৩ টাকা।
নতুন প্রজ্ঞাপনে মাশুলের ক্ষেত্রে ডলারপ্রতি বিনিময় মূল্য ধরা হয়েছে ১২২ টাকা। প্রতি একক কনটেইনার জাহাজ থেকে ওঠানো বা নামানোর জন্য আগে মাশুল ছিল ৫ হাজার ২৯৪ টাকা। এখন তা বাড়িয়ে ৮ হাজার ২৯৬ টাকা করা হয়েছে। এ ছাড়া সব ধরনের সাধারণ পণ্যে কেজিপ্রতি মাশুল বাড়বে গড়ে ১৪ পয়সা। আইসিডিতে ৫০ শতাংশ আইসিডিতে ২০ ফুট রপ্তানি কনটেইনারের প্যাকেজ চার্জ তিন হাজার ৭১৩ টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৯ হাজার ৯০০ টাকা। ৪০ ফুট কনটেইনারের ক্ষেত্রে এই চার্জ চার হাজার ৯৫০ টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৩ হাজার ২০০ টাকা। আগে ৪০ ফুট হাই-কিউব ও ৪৫ ফুট কনটেইনারে ভিন্ন কোনো চার্জ ছিল না। এ ক্ষেত্রে আদায় করা হতো ৪০ ফুট কনটেইনারের সমপরিমাণ প্যাকেজ চার্জ। এখন সেটি ছয় হাজার ৬৫০ টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪ হাজার ৯০০ টাকা। গ্রাউন্ড রেন্ট চার্জ প্রতি ২০ ফুট কনটেইনারের জন্য ৩৫ টাকা বাড়িয়ে ১৫০ টাকা, ৪০ ফুট ও ৪০ হাই কিউব এবং ৪৫ ফুটের কনটেইনারের জন্য ৭০ টাকা বাড়িয়ে ৩০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
যা বলছেন দায়িত্বশীলরা বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক বলেন, এতদিন যে হারে মাশুল আদায় করা হয়েছে তার বড় অংশই ১৯৮৬ সালে নির্ধারণ করা হয়েছিল। এখন বাড়ানো হলেও তা আশপাশের দেশগুলোর তুলনায় কম।বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার বলেন, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন, সুদের হার বৃদ্ধি, শ্রমিক মজুরি ও যন্ত্রপাতির ব্যয়বৃদ্ধি এবং রক্ষণাবেক্ষণ খরচের কারণে সেবা মাশুল বাড়াতে হয়েছে।